মোহছেন মোবারকঃ
ধর্ষণ একটি জঘন্য অপরাধ যা সমাজের শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা এবং শান্তির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি শুধু একটি শারীরিক আঘাত নয়, বরং একটি মানসিক, আত্মিক এবং সামাজিক আঘাত। ধর্ষণ শুধু একজন নারীর উপর নয়, বরং পুরো সমাজের ওপর এর প্রভাব বিস্তার করে, যার ফলে জনগণের মধ্যে অস্থিরতা এবং অবিশ্বাসের জন্ম নেয়। এই অপরাধ সমাজের সকল স্তরের মানুষকে প্রভাবিত করে, তাই এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে।
ইসলাম, যেহেতু একজন পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, সমাজে অপরাধ ও অন্যায় প্রতিরোধের জন্য স্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। ধর্ষণের মতো মারাত্মক অপরাধের ক্ষেত্রে ইসলামী নৈতিকতা অত্যন্ত কঠোর এবং দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত স্পষ্ট। ইসলামে ধর্ষণকে চরম গর্হিত অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এর শাস্তি উভয় জগতে অত্যন্ত কঠোর। কুরআনে আল্লাহ বলেন—
“যে ব্যক্তি সীমালঙ্ঘন করে এবং অন্যায়ভাবে পৃথিবীতে ফিতনা সৃষ্টি করে, আমি তাকে কঠিন শাস্তি দেবো, আর সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। কতই না নিকৃষ্ট সেই আবাসস্থল!” (সূরা মায়েদা: ৩৩)
এই আয়াতটি শুধু ধর্ষণের অপরাধের শাস্তি নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য একটি বার্তা দেয় যে, অন্যায়ভাবে অন্য মানুষের সম্মান এবং নিরাপত্তা ক্ষুন্ন করা, সর্বোচ্চ শাস্তির যোগ্য। ইসলামে ধর্ষণের শিকার নারীর প্রতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার সম্মান রক্ষার দায়িত্ব সমাজের প্রতিটি সদস্যের ওপর ন্যস্ত। সমাজে ধর্ষণের মতো অপরাধ হতে দেবেন না এমন একটি মন্ত্র সমাজের প্রতিটি স্তরে শেকলবদ্ধ করা জরুরি।
ধর্ষণকে সমাজ থেকে নির্মূল করার জন্য পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ইসলামিক শিক্ষা একত্রে কাজ করতে হবে। যদি ছেলে-মেয়েরা ছোটবেলা থেকেই নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা লাভ করে, তবে তারা জীবনে সঠিক পথ অনুসরণ করবে এবং অপরাধের শিকার হওয়ার পরিবর্তে সমাজে ভালো মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। ইসলাম সন্তানদের জন্য এমন একটি দিকনির্দেশনা দেয়, যা তাদের চরিত্র গঠনে সহায়ক হয়। পিতা-মাতার ভূমিকা এই ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পরিবারেই শিশুর প্রথম শিক্ষা শুরু হয়।
একইভাবে, ইসলাম নারীদের নিরাপত্তার জন্যও বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। নারীদের জন্য পর্দার বিধান শুধুমাত্র একটি শারীরিক আচ্ছাদন নয়, বরং এটি তাদের সম্মান এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা। আল্লাহ বলেন—
“হে নবী! আপনার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ এবং মুসলিম নারীদের বলুন, তারা যেন নিজেদের চাদরের কিছু অংশ দিয়ে নিজেদের ঢেকে রাখে। এটি তাদের চেনার জন্য উত্তম, ফলে তারা কষ্ট দেওয়া হবে না।” (সূরা আহযাব: ৫৯)
এটি কেবল নারীদের শারীরিক নিরাপত্তা নয়, বরং তাদের মানসিক শান্তি ও সমাজে সম্মান রক্ষার একটি উপায়। তবে, এটি একপক্ষীয় নয়; পুরুষদের দৃষ্টির সংযমও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ বলেন—
“মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে। এটাই তাদের জন্য উত্তম।” (সূরা নূর: ৩০)
এটি সমাজের উভয় পক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা, যা ধর্ষণের মতো ভয়াবহ অপরাধের সৃষ্টি হতে রোধ করতে পারে।
সার্বিকভাবে, ধর্ষণমুক্ত সমাজ গঠনে আইনগত কঠোরতা, নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা, এবং পারিবারিক মূল্যবোধের সঠিক চর্চা জরুরি। আমাদের সমাজের প্রতিটি সদস্যকে ইসলামের নীতি এবং মূল্যবোধ অনুসরণ করে চলতে হবে। পুরুষদের জাহান্নামের কঠিন শাস্তির ভয় মনে রেখে তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখতে হবে এবং নারীদের তাদের সম্মান রক্ষার জন্য ইসলামের পর্দার বিধান মেনে চলতে হবে। একমাত্র এই সমন্বিত প্রচেষ্টা আমাদের সমাজে ধর্ষণের মতো অপরাধ দূর করতে সক্ষম হবে এবং শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে।
Leave a Reply