নিজস্ব প্রতিবেদক :
আরব আমিরাত প্রবাসী চুনতি ২নং ওয়ার্ডের হাদুর পাহাড় এলাকার মোহাম্মদ আবদুল মান্নান এক যুগ আগে বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিয়ে করেন কক্সবাজারের চকরিয়া থানার রোমানা সিদ্দিকী রুমীকে। তার মন রাখতে বাড়ী তৈরী করে দেন বাবার বাড়ি চকরিয়াতে। নিজে প্রবাসে কঠিন জীবন বেছে নিয়ে স্ত্রীর হাতে তুলে দেন অর্থকড়ি সবকিছু। কিন্তু তবুও মন রক্ষা হয়নি স্ত্রীর। অনেক চেষ্টায় স্ত্রীকে ফেরাতে না পেরে ২০২৩ সালে তাকে তালাক দেন মান্নান।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের, দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে সম্প্রতি ঈদে বাড়ী ফিরেই সাবেক স্ত্রীর যৌতুকের মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন এই রেমিটেন্স যোদ্ধা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিয়ের পর থেকেই স্ত্রী রুমী লোহাগাড়ায় শশুর বাড়ীতে থাকতে চাইতেন না। এ নিয়ে মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের সঙ্গে বেশ কয়েকবার মনোমালিন্য হয়। পরে স্ত্রীর মন রক্ষায় প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারের চকরিয়ায় স্ত্রীর বাবার বাড়িতে জমি কিনে বাড়ি করে দেন তিনি। কিনে দেন কয়েকটি দোকানসহ আরও কিছু সম্পদ। কিন্তু এই সব কিছুই রুমীর মন ভরাতে পরেনি। দুই সন্তানের দিকে তাকিয়ে চুপ থাকেন মোহাম্মদ আবদুল মান্নান।
এরই এক পর্যায়ে ২০২২ সালে দেশে ফিরে স্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন মান্নান। চট্টগ্রাম শহরে বাসা নিয়ে সন্তানদের লালন পালনের চেষ্টা করেন। কিন্তু রুমীকে রাজী করানো যায়নি কোনো কিছুতেই। ২০২২ সালের ২১ নভেম্বর তালাকের হলফনামা তৈরী করেও স্ত্রীকে পাঠান-নি আবদুল মান্নান। তখনো স্ত্রীর ফেরার অপেক্ষা করছিলেন তিনি। কিন্তু সেই খবর জেনে গিয়ে, দুইদিন পরে ২৩ নভেম্বর চকরিয়া আদালতে মান্নানের বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা ঠুকে বসেন রুমী, যা ২৯ মার্চ দেশে ফেরার আগ পর্যন্ত জানতেন নামোহাম্মদ আবদুল মান্নান। ৭ মার্চ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার হন মোহাম্মদ আবদুল মান্নান।
নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মামলায় রুমী অভিযোগ করেছেন ২০২২ সালের ১৩ জুলাই মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বিদেশ যাওয়ার জন্য তাঁর পরিবারের কাছে আড়াই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। অথচ মোহাম্মদ আবদুল মান্নান গত ২০ বছর ধরে আরব আমিরাতের দুবাইয়ে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন। মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের আইনজীবি বিপুল দাশ জানান, ২০২২ সালের নভেম্বরে তালাকের হলফ নামা তৈরী করে মোহাম্মদ আবদুল মান্নান বিদেশে চলে যান। আশা করেছিলেন রুমী ফিরবেন। কিন্তু ছয়মাস অপেক্ষার পর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ৩০ এপ্রিল তিনি রুমীকে তালাক নোটিশ প্রেরণ করেন। এরপর চার দফায় দেনমোহর আদায়ের জন্য নোটিশ পাঠানো হলেও রুমী কোনো সাড়া দেননি।
আইনজীবী বিপুল দাশ বলেন, ‘মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের সঙ্গে তালাক হওয়ার পর, সেই বিষয়েটি মেনে নিয়ে ২০২৪ সালের নতুন বিয়ে করেন রুমী। এই অবস্থায় কোনো ভাবেই পূর্বের দায়ের করা যৌতুকের মামলা চলতে পারে না।’
‘মূলত হয়রানি ও অবৈধ সুবিধা প্রাপ্তির জন্য উদ্দেশ্যমূলক মামলায় মান্নানকে গ্রেফতার করানো হয়েছে। আশা করছি, আদালতের কাছে আমরা ন্যায় বিচার পাবো,’ তিনি বলেন।
মান্নানের মা চেমন আরা অভিযোগ করেন, ‘আমার ছেলে গত ২০ বছর ধরে বিদেশে আছে, তাঁর কেন বিদেশ যেতে টাকা লাগবে? মূলত নিজের প্রতিশোধ চরিতার্থ করতে রুমী আমার সন্তানকে গ্রেফতার করিয়েছে।’ ‘মান্নানকে গ্রেফতারের সময় রুমির উপস্থিতিতে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে আমাদের বাড়ি লুটপাটের চেষ্টা চালায়। এসময় আমাদের প্রতিবেশীদের বাঁধায় ব্যর্থ হয়ে, নারী ও শিশুসহ ১৪ জনকে আসামি করে মামলা ঠুকে দেওয়া হয়।’ ‘শুধু তাই নয়, আমার ছেলেসহ তাঁর পরিচিতদের বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে রুমি ও তাঁর পরিবার।আমরা আইনের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
আইনজীবি বিপুল দাশ বলেন, ‘ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ ওই নারী শুধু মাত্র মান্নানকে ফাঁসিয়ে ক্ষান্ত হয়নি। নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানি করার চেষ্টা করছে। আদালত তা বুঝতে পেরে অভিযুক্তদের জামিন মঞ্জুর করেছেন।’ স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুল মাবুদ রয়েল বলেন, ‘ছোট বেলায় বাবা হারানো মোহাম্মদ আবদুল মান্নান দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে আছেন। সম্প্রতি ঈদে বাড়ী ফিরলে তাঁর সাবেক স্ত্রী লোকজন নিয়ে এসে পুলিশকে দিয়ে তাঁকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালায়।’ ‘এ সময় গ্রামবাসী প্রতিবাদ জানালে, তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যাবহার করে মোহাম্মদ আবদুল মান্নানের সাবেক স্ত্রী। পরে উল্টো তিনিই গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করে হয়রানির চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে জানতে রোমানা সিদ্দিকী রুমীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সংযোগ স্থাপন করা যায়নি ।
Leave a Reply