1. news@dainikchattogramerkhabor.com : Admin Admin : Admin Admin
  2. info@dainikchattogramerkhabor.com : admin :
বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪১ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
উৎসবমুখর বোয়ালখালী: নববর্ষে প্রশাসনের বর্ণিল আয়োজন নববর্ষ ১৪৩২: বোয়ালখালীতে বলি, গানে, নৃত্যে প্রাণের উৎসব চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মাসিক কল্যাণ সভা অনুষ্ঠিত চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় আরও ১১ জনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ আনোয়ারায় ট্রাক-অটোরিক্সা সংঘর্ষে নিহত ১,যুবক আহত মুদি দোকানের আড়ালে মাদকের রমরমা ব্যবসা, ৯৪৯ পিস ইয়াবাসহ আটক দুই সহোদর চট্টগ্রামে সিআরবি মালিপাড়া বস্তিতে ভয়াবহ আগুন পহেলা বৈশাখে পথচারীদের শরবত পান করালেন বৌদ্ধ অগ্রগামী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক সামশুল আলম চৌধুরীর ১৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী ১৮ এপ্রিল নাইক্ষ্যংছড়িতে বর্ণিল আয়োজনে বর্ষবরণ

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির অন্তরালে আল্লামা শাহ আব্দুল জব্বার (রহ.) শিক্ষা-সমাজসেবা ও ইসলামি অর্থনীতির বাতিঘর -এম ফখরুল ইসলাম সাঈদী

  • সময় সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১২ পঠিত

 

বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কিছু মানুষ থাকেন যাঁরা কেবল একটি সময়কে আলোকিত করেন না, বরং বহুকাল ধরে তাঁরা হয়ে থাকেন মানবতার বাতিঘর, জাতির বিবেক। হাদিয়ে জামান, শাহসূফি আল্লামা শাহ আব্দুল জব্বার (রহ.) তেমনই এক বিরল ব্যক্তিত্ব, যাঁর জীবন একদিকে যেমন গভীর ধর্মীয় সাধনায় দীপ্ত, তেমনি অন্যদিকে বাস্তব জীবনের নানা অঙ্গনে তিনি রেখে গেছেন অপরিসীম অবদান।বায়তুশ শরফের এই মহান সাধক শুধু একজন পীর ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন চিন্তাবিদ, সমাজসংস্কারক, সংগঠক ও প্রবর্তক। তিনি ছিলেন এমন একজন আলোকবর্তিকা, যিনি অন্তরাত্মার ইশারায় জাতিকে নতুন দিশা দেখিয়েছেন। তাঁর দৃষ্টিতে ইসলাম ছিলো কেবল একটি তাত্ত্বিক দর্শন নয়, বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে-শিক্ষা, সমাজসেবা, অর্থনীতি- ইসলামের বাস্তবিক প্রয়োগের এক নিরন্তর সাধনা।

আল্লামা জব্বার (রহ.)-এর নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিলো “বায়তুশ শরফ আঞ্জুমানে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ”-একটি বহুমাত্রিক সমাজকল্যাণমূলক সংগঠন, যার মাধ্যমে দেশের সর্বত্র, বিশেষত পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অঞ্চল থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে শত শত মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানা, স্কুল, কলেজ ও হাসপাতাল। কোথাও যদি নিঃস্ব একজন পথশিশুর মুখে হাসি ফুটে ওঠে, যদি কোনো এতিম শিশুর হৃদয়ে আশ্রয়ের আলো জ্বলে ওঠে, যদি কোনো রোগীর মুখে একটু প্রশান্তি আসে, তাহলে সেটার মূলে রয়েছে এই মহামানবের অফুরন্ত দোয়া, দূরদর্শিতা ও কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক চিন্তা।তাঁর কল্পনা ছিলো একটি ইসলামী অর্থনীতিনির্ভর সমাজ- যেখানে সুদ, শোষণ ও বৈষম্যের পরিবর্তে থাকবে ইনসাফ, সহানুভূতি ও ইনক্লুসিভ উন্নয়ন। সেই চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দিতে তিনি সামনে এনেছিলেন ইসলামী ব্যাংকিং-এর ধারণা। আজ যে “ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড” দেশের শীর্ষ ব্যাংক হিসেবে পরিচিত, তার পেছনের নীরব কারিগর ছিলেন এই মহান পীর।

তিনি ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অন্যতম স্বপ্নদ্রষ্টা। কিন্তু আজ সেই প্রতিষ্ঠান কিংবা ইসলামী ব্যাংক-তার মূল্যায়নে কতটুকু সৎ এবং কৃতজ্ঞ, তা আমাদের আত্মজিজ্ঞাসার বিষয়। এই সুফি সাধকের নামে কোনো কেন্দ্রীয় ভবন, কোনো স্মৃতিসৌধ কিংবা তাঁর আত্মত্যাগের স্বীকৃতি কোথাও দৃশ্যমান নয়-যা অত্যন্ত পরিতাপের।যদি আমরা শিক্ষা, সমাজসেবা এবং ইসলামি অর্থনীতিতে সর্বাধিক অবদান রাখা ব্যক্তিত্বদের একটি নিরপেক্ষ তালিকা প্রস্তুত করি, তবে আল্লামা শাহ আব্দুল জব্বার (রাহ.)-এর নাম থাকবে সেই তালিকার শীর্ষে। অথচ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির ক্ষেত্রে তিনি এখনও রয়ে গেছেন এক অবহেলিত ইতিহাস! একুশে পদক কিংবা স্বাধীনতা পুরস্কার-এই সম্মাননাগুলো শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ের মাধ্যমে বিতরণ হোক তা নিশ্চয়ই কাম্য নয়। বরং যারা নিরব-নিভৃত পথে জাতির কল্যাণে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, তারা যেনো আমাদের মূল্যায়নের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন-এই তো মানবতা, এই তো ইনসাফ।

তাঁর সারা জীবনের সাধনা ছিলো নিঃস্বার্থ, নিরবিচারে মানবতার খেদমত। তিনি ছিলেন ‘বাতেনি তাসাউফ’ ও ‘জাহেরি খেদমতের’ যুগপৎ সাধক। যিনি একদিকে হৃদয়ের বিশুদ্ধতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন, অন্যদিকে সামাজিক দায়িত্ববোধকে ঈমানেরই অংশ বলে মনে করেছেন। এই তো ছিলো সত্যিকারের সুফিবাদ—যা মানুষকে আল্লাহর দিকে টানে, আবার সমাজের দায়িত্ব থেকেও বিমুখ করে না।তাহলে প্রশ্ন ওঠে-এমন একজন আলেম, সমাজ সংস্কারক ও রাষ্ট্রনির্মাণে চিন্তাশীল পীর ব্যক্তি কেন আজও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির বাইরে? কেবল তিনি একজন সুফি বা আলেম ছিলেন বলেই কি রাষ্ট্রীয় যন্ত্রের মূল্যায়নে তিনি উপেক্ষিত? যদি তাই হয়, তবে আমরা শুধু একজন মানুষকে নয়, একটি মূল্যবোধকে, একটি তাজা আলোকিত ধারাকে উপেক্ষা করছি। আজ যখন দেখি, এই মহান সাধকের জীবন ও কর্ম নিয়ে দেশে-বিদেশে এমফিল ও পিএইচডি গবেষণা হচ্ছে, তখন মনে হয়—আন্তর্জাতিক মহল যেখানে তাঁকে নিয়ে গবেষণা করছে, আমরা সেখানে এখনও তাঁর স্বীকৃতির প্রশ্নে নির্বিকার!

পরিশেষে এটুকুই বলবো, একজন মহান সাধক, নিরব সমাজ সংস্কারক, ইসলামী অর্থনীতির দিকপাল, এবং জাতির এক প্রাজ্ঞ অভিভাবক আল্লামা শাহ আব্দুল জব্বার (রাহ.)-তাঁর জীবন ও কর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল, বিবেকবান ও সচেতন মহলের প্রতি বিনীতভাবে আহ্বান জানাই, যেন তাঁকে উপযুক্ত সম্মান দিয়ে একুশে পদক কিংবা স্বাধীনতা পদকের মতো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিতে ভূষিত করা হয়। এটি কেবল তাঁর প্রতি আমাদের ঋণ শোধ নয়, বরং সত্য ও সাধনার পথে আগত প্রজন্মের জন্য একটি দীপ্ত আদর্শ উপহার। তাঁর মতো এক মহান সুফিকে স্বীকৃতি দেওয়া মানে—আমাদের আত্মার সম্মান রক্ষা করা, জাতীয় চেতনার বিশুদ্ধ একটি স্তম্ভকে সংরক্ষণ করা। আসুন, আমরা সেই মহামানবের প্রতি আমাদের জাতির ন্যূনতম ঋণ পরিশোধ করি। তাঁর আত্মত্যাগ, চিন্তা ও কর্ম যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে থাকে-এই হোক আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকার।

লেখক: সংগঠক ও মানবাধিকারকর্মী।

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
কপিরাইট © ২০২০ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
ওয়েবসাইট ডিজাইন: ইয়োলো হোস্ট