কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল প্রাণ।দেশের ৪০ শতাংশের বেশি মানুষ এই কৃষি কাজের সাথে জড়িত।কিন্তু দুঃখের বিষয় এই খাতটিতে সে তুলনায় বিনিয়োগের পরিমাণ সামান্য।মাঠ পর্যায়ের তথ্য অনুযায়ী একজন কৃষক নিজেই তার কৃষি উৎপাদনের বিনিয়োগের প্রথম বিনিয়োগকারী। বর্তমানে দেশে কৃষিতে জনপ্রতি বিনিয়োগ ১৬ ডলার অন্যদিকে মূল্য সংযোজন ১ হাজার ৩৭ ডলার,যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জনপ্রতি বিনিয়োগ গড় মূল্য সংযোজনের চেয়ে তুলনামুলক ভাবে অনেক কম।আমরা কৃষি অর্থনীতি পরিকল্পনার জায়গাতে সবার আগে জিডিপি কেমন হচ্ছে সেটি বিবেচনা করি, দিন দিন জিডিপিতে কৃষির অবদান কমছে। প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষক কাজ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কৃষির পারিবারিক ঐতিহ্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নয়ন হলেও এর সুফল সমপরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষকের জমির মালিকানা খন্ড খন্ড হওয়ার কারণে উৎপাদনে পার্থক্য দেখা দিচ্ছে।ফসল চাষ করা থেকে শুরু করে ফসল তোলা পর্যন্ত যন্ত্রের ব্যবহার ধীর গতিতে করা হচ্ছে,এতে সময় অপচয় হচ্ছে। উৎপাদক শ্রেণী কৃষক বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকার কারণে কৃষক তার পণ্যের সঠিক মূল্য এখন পর্যন্ত পাচ্ছে না।কৃষি পণ্যের প্রচলিত বাজার সিন্ডিকেটের অবনতির কারণে কৃষক ফসল উৎপাদন করে খুব বেশি লাভবান হতে পারছে না।
পরিসংখ্যানে দেখা যায় কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদিত পৃথিবীতে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্যের বাজার ৭০ বিলিয়ন ডলারের। এ বাজারে আমাদের অবস্থান নাম মাত্র বললেই চলে। আমরা রপ্তানি করি ৫০০ মিলিয়ন ডলার যা শতকরার হিসেবে দুই ভাগ মাত্র।
দেশের মোট শ্রম শক্তির ৭০ থেকে ৮০ভাগ কৃষিতেই ব্যয় করা হয়।বিদেশের বাজারে আমাদের কৃষি পণ্যের অবাধ বাণিজ্য নেই। তাই আমরা ইউরোপ আমেরিকার বড় বড় মার্কেট গুলোতে আমাদের কৃষি পণ্য নিয়ে ঢুকতে পারছি না। রপ্তানি মুখি কৃষি পণ্য উৎপাদন ও বাজার অগ্রসর করে তুলতে আমাদের কোন অবকাঠামোগত প্রচেষ্টা নেই।করোনা কালে স্পষ্ট হয়েছে যে,কৃষি উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে দেশের অর্থনীতি সচল থেকেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কৃষি আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
আমাদের কৃষকদের পুরাতন কৃষি পদ্ধতি বাদ দিয়ে আধুনিক যান্ত্রিক কৃষি পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও ফসল তোলার ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য কৃষির উপর বিনিয়োগের প্রয়োজন। জমির অপচয় রোধ ও উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য সঠিক পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে হবে।কৃষি মাটি ক্রয় বিক্রয় বালু উত্তোলন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।বীজ উৎপাদন, জেনেটি ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষি গবেষণার জন্য সকল সুযোগ সুবিধা সহজ সরল করে দিতে হবে।কৃষকদের শহরমুখী মনোভাব থেকে সরিয়ে আনার প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে।তরুণ প্রজন্মের পাঠ্যপুস্তকে কৃষি শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং কৃষির ব্যবহারিক কাজ তাদের হাতে কলমে শেখাতে হবে।কৃষি কাজে ব্যবহারিত সকল উপকরণ সহজলভ্য করে দিতে হবে। কৃষকের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।বাংলাদেশ চিরসবুজ একটি দেশ, নাতিশীতোষ্ণ এই অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এই দেশটি কৃষি কাজের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।নদ-নদী খাল বিল শুষ্ক মৌসুমে পানি সেচের প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে। ভূগর্ভস্থ পানিও খুব সহজে পাওয়া যায়।সুতরাং কৃষি কাজের উন্নয়ন ব্যতীত বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বর্তমান সরকারের প্রতি অনুরোধ কৃষি ক্ষেতে উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করুন এবং বিনিয়োগ করার ব্যবস্থা করুন।কৃষি কৃষক বেঁচে থাকলে আমরাও বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারবো।
মোহাম্মদ ইউসুফ
সাধারণ সম্পাদক, গণঅধিকার পরিষদ,চট্টগ্রাম মহানগর।