জামশেদুল ইসলামঃ
বর্ণিল আয়োজনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে বাংলা বর্ষবরণ করা হচ্ছে। সোমবার (১৪ এপ্রিল) রোদের তীব্রতা উপেক্ষা করে এসব অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন অনেকে। তবে এবার জনসমাগম অন্য বছরের চেয়ে কম!আগের দিন রবিবার সন্ধ্যায় নগরের বর্ষবরণ-বর্ষবিদায়ের সবচেয়ে বড় আয়োজনস্থল ডিসি হিলের নজরুল স্কয়ারে মঞ্চে ভাঙচুর, হামলার পর ভয়-আতঙ্কে লোকজন কম হয়েছে বলে ধারণা। কিন্তু কেউ কেউ রোদের প্রখরতাকে দায়ী করেছেন। এদিকে বর্ষবরণের আয়োজন ঘিরে নগরজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ।
নববর্ষ উদ্যাপন পরিষদ রবিবার থেকে সিআরবির শিরীষতলায় দুদিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। রবিবার বিকেল ৪টায় শুরু হয় দুঘণ্টার বর্ষবিদায়ের অনুষ্ঠান। নির্বিঘ্নে শেষও হয়। কিন্তু অনুষ্ঠান চলাকালেই আধা কিলোমিটার দূরত্বে থাকা ডিসি হিলে নববর্ষের অনুষ্ঠানের জন্য নির্মাণ করা মঞ্চ ভাঙচুর হয়। এমন অবস্থায় ডিসি হিলে সোমবারের নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠান বাতিল করেন আয়োজকেরা।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৭টায় ভায়োলিনিস্ট চিটাগংয়ের বেহালা বাদনের মধ্য দিয়ে সিআরবিতে। ‘নববর্ষ উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রামের’ দিনব্যাপী আয়োজনে উদীচী চট্টগ্রাম, সঙ্গীত ভবন, সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ রেলওয়ে সাংস্কৃতিক ফোরাম, স্বরলিপি সাংস্কৃতিক ফোরাম, সৃজামী, অদিতি সঙ্গীত নিকেতনসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা সম্মিলিত গান পরিবেশন করেন।বোধন আবৃত্তি পরিষদ, শব্দনোঙ্গর, তারুণ্যের উচ্ছ্বাসসহ কয়েকটি সংগঠনের শিল্পীরা পরিবেশন করেন বৃন্দআবৃত্তি। ওড়িষি অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার, নৃত্যনীড়, রাগেশ্রীসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন।নববর্ষ উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফারুক তাহের বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ আমাদের প্রাণের উৎসব। সকল মত-পথের ঊর্ধ্বে উঠে দিনটি আমাদের এক হয়ে নিজেদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরার প্রেরণা দেয়। আমরা একেকজন একেক ধর্মের অনুসারী হতে পারি। পহেলা বৈশাখ,পহেলা ফাল্গুন, পৌষপার্বণ, নবান্ন এগুলো আমাদের চিরায়ত সংস্কৃতি।এছাড়া নগরের বাদশা মিয়া সড়কে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাস থেকে ৩০-৪০ জন নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে সকালে বর্ষবরণ শোভাযাত্রা বের করা হয়।তবে প্রতিবছর ওই শোভাযাত্রার ব্যানারে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ লেখা থাকলেও এবার ছিল না। এবার লেখা ছিল ‘বর্ষবরণ ১৪৩২, চারুকলা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়’।শোভাযাত্রাটি চট্টেশ্বরী মোড় হয়ে আলমাস মোড়, কাজীর দেউড়ি মোড়, এস এস খালেদ রোড, প্রেস ক্লাব ঘুরে সার্সন রোড হয়ে পুনরায় চারুকলা ইনস্টিটিউটে গিয়ে শেষ হয়।শিক্ষার্থীদের তৈরি জাতীয় মাছ ইলিশ এবং টেপা পুতুলের ঘোড়ার মোটিফ স্থান পায় ঢোলবাদ্যের তালে তালে এগিয়ে যাওয়া শোভাযাত্রায়। মুখোশ হিসেবে ছিল বাঘ, মহিষ ও খরগোশের প্রতিকৃতিও শোভা পায়।এদিকে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ বিভিন্ন স্থানে বর্ণিল উৎসব চলছে। বেলা ১২টার দিকে নগরের বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অবাদ সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে বর্ষবরণের শোভাযাত্রা বের হয়। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিও নগরের নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয়ে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
সরেজমিন সিআরবি এলাকা
সোমবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত সিআরবি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে নাচ, গান, আবৃত্তি ও কথামালায় চলছে বৈশাখী আয়োজন। আয়োজনস্থল শিরিষতলায় হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া বাকি সবাই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া শিল্পী এবং তাদের আত্মীয়-স্বজন। সাত রাস্তার মোড় থেকে শিরিষতলা পর্যন্ত মানুষের আনাগোনা কম। যারা আসছেন, তাদের অধিকাংশ উৎফুল্ল হলেও আতঙ্ক রয়েছে মনে। বিশেষ করে পরিবার নিয়ে আসা মানুষগুলোর মধ্যে কোনো রকমে ঘুরে বাড়ি ফেরার তাড়া দেখা যায়।এদিকে, এবার হয়নি সাতরাস্তার মোড়ের সেই বলীখেলাও। বিকল্প হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে জাতীয় খেলা হা-ডু-ডু। তবে এটি টানতে পারেনি দর্শনার্থী। সবমিলিয়ে আয়োজনগুলোতে আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীরাই যেন দর্শক!সিআরবি এলাকায় আসা সুমন নামে একজন বলেন, ‘এবারের আয়োজন আছে। কিন্তু আয়োজনগুলো যেন নিস্প্রাণ। মানুষ নেই। শুধু নাচ-গান হচ্ছে।দর্শনার্থীদের মধ্যেও কোনো উদযাপনের লক্ষ্য নেই। ফাঁকা ফাঁকা লাগছে সব।সাত রাস্তার মোড়ে দেলোয়ার নামে এক দোকানি বলেন, ‘সিআরবিতে এমনিতেই তো বিকেল বেলা অনেক মানুষ হয়। আমরা আজকে অনেক ভিড় হবে ভেবে মাল (বিভিন্ন খেলনা) তুলেছি। কিন্তু মানুষ নাই। যারা আসছে, তাদেরও মেলা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। তাই পুরো পহেলা বৈশাখ মরা মরা লাগছেপহেলা বৈশাখ মরা মরা লাগছে।রুকন নামে একজন বলেন, ‘ছেলে-মেয়েদের দেখানো দরকার। শেখানো দরকার। তাই নিয়ে এসেছি। তাদের মধ্যে আমাদের বাঙালি সত্ত্বার বীজ বপন না করলে, এ সংস্কৃতি থাকবে না। বিতর্কের জায়গা থেকে অনেকের মধ্যে ভয় আছে। তবে আয়োজক ও প্রশাসনের নিরাপত্তা ভালোই আছে।আয়োজকদের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘গতকালের ডিসি হিলের ঘটনায় মানুষের মধ্যে একটা ভয় আছে। তাই অনেকে আসছেন না। আসলেও বেশি সময় নিয়ে থাকছেন না। তাই ভিড় হচ্ছে না।’
Leave a Reply