স্টাফ রিপোর্টারঃ
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে গত শনিবার (২৭ এপ্রিল/২৫) পর্যন্ত নতুন করে ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। ইতোমধ্যে যৌথভাবে তাদের আঙুলের ছাপও নিয়েছে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর)।
এদের নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়াল অন্তত ১৩ লাখ ১৩ হাজারে। তবে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আইরিশের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্তের অনুমতি এখনও দেয়নি সরকার।
নতুন আসা রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে ইউএনএইচসিআর। গত সপ্তাহে তারা শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়কে এ চিঠি দেয়। গতকাল রোববার ২৭ এপ্রিল) রাতে সংশ্লিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করে।
সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে শনিবার পর্যন্ত দেড় বছরে আসা রোহিঙ্গাদের নতুন হিসাবে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে গত বছরের মে-জুনের পর। চলতি বছরের প্রায় প্রতিদিন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
শুধু গত সপ্তাহেই রাখাইন থেকে এসেছে ১ হাজার ৪শ ৪৮টি পরিবার। এ ছাড়া আলাদাভাবে এসেছে আরও ৫ হাজার ৯শ ৩০ জন। নতুনভাবে আসা রোহিঙ্গারা ২৯ হাজার ৬শ ৭ পরিবারের সদস্য। সীমান্তে বাংলাদেশের সতর্কতার মধ্যেও নতুন আসা ১ লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে ৫৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ নারী, বাকিরা পুরুষ।
অপর একটি সূত্র বলছে, নতুনভাবে আসা রোহিঙ্গা অধিকাংশ বর্তমানে কক্সবাজারে ২০টি ক্যাম্পে তাদের আত্মীয়ের বাসায় রয়েছে। নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ২৭ নম্বর ক্যাম্পে ৮ হাজার ৩শ ৬৮ জন, ২৬ নম্বরে ৭ হাজার ৭শ ৭২ জন, ২৪ নম্বরে ৬ হাজার ৩শ ৯৫ জন, ৯ নম্বর ক্যাম্পে পাঁচ হাজার ৯শ ৫৫ জন, ক্যাম্প ১২-তে ৫ হাজার ৯শ ৪০ জন, ক্যাম্প ওয়ান-ই-তে ৫ হাজার ৭শ ৮৮ জন, ক্যাম্পে ১৮-তে ৫ হাজার ৭শ ৪৬ জন, ৪ নম্বরে পাঁচ হাজার ১৫জন, ১৩ নম্বরে চার হাজার ৩শ ৩১ জন, ৭ নম্বরে ৪ হাজার ১শ ৬৫ জন, ১৭ নম্বরে ৪ হাজার ১শ ৩০ জন, ১৫ নম্বরে ৩ হাজার ৯শ ৭২ জন, ৮ নাম্বার ক্যাম্পে ৩ হাজার ৩শ ৪০ জন, ওয়ান-ডব্লিউতে ৩ হাজার ১শ ৯৪ জন, টু-ইতে ৩ হাজার ১শ ১০ জন, ক্যাম্প ২৫-এ ৩ হাজার ১শ ৩ জন, ৫ নম্বরে ৩ হাজার ৩৮ জন, ১০ নম্বরে ৩ হাজার ৫ জন, ১৬ নম্বরে ২ হাজার ৮শ ৯৩ জন, ৩ নম্বরে ২ হাজার ৮শ ৯৩ জন, ১১ নম্বরে ২ হাজার ৮শ ৩১ জন, ১৯ নম্বরে ২ হাজার ৮শ ১৫ জন, ২১ নম্বরে ২ হাজার ৭শ ৭১ জন, টু-ডব্লিউতে ২ হাজার ৪শ ৫৭ জন, এইট-ডব্লিউতে ২ হাজার ২শ ৬৯ জন, ক্যাম্প ১৪-তে ১ হাজার ৬শ ৩ জন ও ক্যাম্প ২০ নম্বরে ১ হাজার ৫শ ৪ জন।
আরো পড়ুন : ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায়ে সাংবাদিক জেলে, ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিল বিএমএসএফ
অনেকে আবার ক্যাম্পে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেয়। সব রোহিঙ্গার জন্য আবাসস্থলের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। সরকার এখনও এর জবাব দেয়নি।
তবে মৌখিকভাবে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থাকে জানানো হয়েছে, চলমান বাস্তবতায় লক্ষাধিক নতুন রোহিঙ্গার জন্য আবাসস্থলের ব্যবস্থা করা কঠিন। ক্যাম্পে বিদ্যালয়সহ ইউএনএইচসিআরের আর কী কী ধরনের অবকাঠামো রয়েছে, তা জানাতে বলা হয়েছে। এর পর ইউএনএইচসিআর বলছে, আলাদা ঘর তৈরি করে দেওয়া সম্ভব না হলে দোতলা ঘর বানানো যায় কিনা, তা ভেবে দেখতে হবে।
কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নিয়ে নানা চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকির মুখে আছে বাংলাদেশ। তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে দেনদরবার করছে বাংলাদেশ। এখন প্রত্যাবাসনের বদলে আরও নতুন রোহিঙ্গা দেশে ঢোকায় চাপে পড়ছে বাংলাদেশ।
জানতে চাইলে আরআরআরসি কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ১ লাখের বেশি নতুন রোহিঙ্গার আবাসস্থলের ব্যবস্থা করতে ইউএনএইচসিআরের একটি চিঠি পেয়েছি আমরা। বিরাট সংখ্যক এই রোহিঙ্গার জন্য নতুনভাবে ঘর তৈরির জায়গা আমাদের নেই।
তিনি বলেন, নতুন আবাসস্থল নির্মাণের এই প্রচেষ্টা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে কঠিন করে তুলবে। কারণ এতে রাখাইনে থাকা অন্য রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে উৎসাহিত হবে।
একাধিক সূত্র জানায়, রাখাইন রাজ্যে জান্তা সরকারের সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাতের পর থেকে রোহিঙ্গারা নতুনভাবে বাংলাদেশে ঢুকছে। জান্তা সরকার সেখানে পরাস্ত হওয়ার পরও রোহিঙ্গার ঢল থামছে না। এখন প্রায় প্রতিদিন নাফ নদ ছাড়াও পাহাড়ি পথে নানাভাবে রোহিঙ্গারা আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য বাজেট সংকট দেখা দিচ্ছে। এমন বাস্তবতায় কীভাবে নতুন রোহিঙ্গাদের আবাসস্থলের জন্য অর্থের সংস্থান হবে– জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ঘর তৈরির বিষয় সরকারের সবুজ সংকেত পেলে দাতা সংস্থার কাছে অর্থ চাইবে ইউএনএইচসিআর।
দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৬০ বছরের বেশি বয়সী নারী ৩ হাজার ৮শ ৯০ জন, পুরুষ ৩ হাজার ৯শ ৩০ জন।
১৮-৫৯ বছর বয়সী নারী ২৭ হাজার ১শ ৭৩ ও পুরুষ ১৯ হাজার ৮শ ২৫ জন।
১২-১৭ বছর বয়সের নারী ৭ হাজার ৩শ ১ ও পুরুষ ৬ হাজার ৪শ ৮ জন।
৫-১১ বছরের নারী ১২ হাজার ২শ ৭ ও পুরুষ ১১ হাজার ৭শ ২৭ জন।
১-৪ বছরের নারী ৯ হাজার ১শ ৫৫ ও পুরুষ ৯ হাজার ২শ ৫৫ জন।
এ ছাড়া এক বছরের নিচে নারী ১ হাজার ২শ ৯০ ও পুরুষ ১ হাজার ৩শ ২০ জন।
Leave a Reply