মোহাম্মদ আলবিন,আনোয়ারা প্রতিনিধি:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা জানান, বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় এবং বিনিয়োগের জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা। এখানকার শ্রমিকদের মজুরি কম; যা বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় সুযোগ।
সোমবার (৭ এপ্রিল) চার দিনব্যাপী শুরু হওয়া বিনিয়োগ সম্মেলনের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড) পরিদর্শন শেষে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের একটি প্রতিনিধি দল এসব মন্তব্য করে।
এ সময় তারা কেইপিজেডের বিল্ডিং ১ গার্মেন্টস কোরিয়ান, কেপিপি ২, কেপিপি ১, বিল্ডিং ২১ কেএসআই গার্মেন্টস, গার্মেন্টস ২, আর্ট গ্যালারি, টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি, মেডিকেলসহ বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করেন এবং সুযোগ সুবিধা পর্যবেক্ষণ করেন।
জানা যায়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) বিনিয়োগ সম্মেলন ২০২৫ এর প্রথম দিনে এই কর্মসূচি নেয়। এদিন চীন, কোরিয়া, জাপানসহ ৪০টি দেশের ৬০ জনের একটি প্রতিনিধি দল এ সফরে অংশগ্রহণ করে। মূলত বাংলাদেশের কারখানার বাস্তব চিত্র পরিদর্শনের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের এদেশে বিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করাই এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য।
পরিদর্শনে আসা নেদারল্যান্ডসের বিনিয়োগকারী রিক বলেন, ‘এখানে অনেক সুবিধা রয়েছে, এখানকার সব পরিদর্শন করে আমার কাছে খুব ভালো মনে হচ্ছে। এখনোও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি তবে আমি দেখছি, আশা করি এটা বিনিয়োগের উপযোগী।’
আরেক বিনিয়োগকারী চীনা এভিপি কোম্পানির ম্যানেজিং পার্টনার কেভিন মুউ বলেন, ‘বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ একটি ভালো জায়গা। এখানকার শ্রমিকদের মজুরি কম, এছাড়া নানান সুবিধা রয়েছে। চীন আর এখানকার কারখানার মধ্যে অন্যতম পার্থক্য হলো চীনে মেশিনের মাধ্যমে সব কাজ করা হয় কিন্তু বাংলাদেশের কারখানাতে বেশিরভাগ কাজ শ্রমিকরা নিজেদের হাতেই করে থাকে। এসময় তিনি আশা ব্যক্ত করে বলেন, যদি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকে তাহলে অনেক চাইনিজ বিনিয়োগকারী এখানে বিনিয়োগ করবেন।’
বেজার প্রধান পরামর্শক মো. আবদুল কাদের খান বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের এখানকার কারখানার বিভিন্ন এক্টিভিটিস এবং সম্ভাবনাময় চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে জানানো হচ্ছে, দেখানো হচ্ছে। আশা করছি তারা ভালো কিছু দেখছেন। এখানে পরিদর্শনে আসার প্রধান উদ্দেশ্য হলো বিনিয়োগকারীরা যাতে রিয়েল বাস্তবতাটা দেখে এবং বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ হয়।’
এ সময় পরিদর্শনে আসা বেজার পিডি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুক বলেন, ‘আজ বেজার উদ্যোগে ২টা কারখানা পরিদর্শন করা হবে। একটি কেইপিজেড এবং অন্যটি মিরসরাই। কেইপিজেডকে বেজার সাথে একিভূত করার যে মিশন সে লক্ষ্যে বেজা বিনিয়োগ বাড়াতে এই সম্মেলনের আয়োজন করেন। বিদেশিরা বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক কিছুই শুনে। সেটা সরাসরি পরিদর্শন করতে তারা এখানে এসেছেন। আশা করি তারা সবাই পজিটিভ মাইন্ড থেকেই এটা পরিদর্শন করছেন।’
কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড) কর্পোরেশন (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজাহান বলেন, ‘বিনিয়োগকারীরা আজ প্রথমদিনে কেইপিজেডে এসেছেন, এরপর মিরসরাই ও পরবর্তীতে ঢাকায় যাবেন। তাদেরকে এখানে আনা হয়েছে একটি প্রাইভেট কারখানা দেখার জন্য। আমরা তাদের স্বাগত জানিয়েছি। তারা দেখুক বাংলাদেশের ইপিজেডগুলোর অবস্থা কেমন, বিনিয়োগের কি অবস্থা, বাংলাদেশে অবস্থিত কেইপিজেডগুলোর কোনটা কি অবস্থায় আছে, সেটা সরাসরি দেখুক এবং বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক ‘
এ সময় তিনি বলেন, ‘যাচাই বাছাই এবং বিবেচনা করে কেইপিজেড সব ধরনের বিনিয়োগ নিতে প্রস্তুত।’
পরিদর্শন শেষে বিনিয়োগকারীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় ইয়ংওয়ান কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এবং সিইও কিহাক সাং বলেন, ‘এটি প্রথমবারের মতো যেখানে আমরা বিদেশি বিনোয়োগকারীদের অফিসিয়ালি এখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছি, নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশে বিনিয়োগকারী টানতে কাজ করছেন। আগের আর বর্তমান সরকারের মধ্যে পার্থক্য হলো এই সরকার বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন, এবং বিনিয়োগ বাড়াতে কাজ করছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ একটি আদর্শ জায়গা, এখানকার মানুষ এবং পরিবেশ খুবই উপযোগী। তাই প্রত্যেককে এখানে এসে তাদের ভবিষৎ বিনিয়োগ করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
পরিদর্শনে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বিনিয়োগকারী, বেজা কর্মকর্তা, প্রশাসন ও কেইপিজেডের সিনিয়র কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply