An idle brain is the devil’s workshop। অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। মানবজীবনের গুরুতর ব্যাধি ও বাজে স্বভাব হলাে আলস্য। জীবনের সমস্ত শক্তিকে ধ্বংস করে দিয়ে দেহের বিভিন্ন রােগ ব্যাধি সৃষ্টি করে মানুষকে পঙ্গু করে দেয়। অলস ব্যক্তি তার শক্তি এবং সামর্থ্য সম্বন্ধে একেবারে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। এই অলসতাকে দূরে ঠেলে যখন কোন কাজ মনোবল নিয়ে করা যায় তখন প্রত্যেকটা কাজে সফলতা পাওয়া যায়। অলসতায় যাকে পেয়ে বসেছে, সে সৃষ্টিশীল,মননশীল কিছুই করতে পারে না। সমাজে,পরিবারে সে অকর্মক,স্হবির। অভ্যাসগতভাবে সে সাংঘাতিক রোগাগ্রস্ত জঘন্য ও ধিকৃত মানসিকতার হয়ে থাকে।
অলস ব্যক্তি জীবনে কখনো উন্নতি করতে পারে না। জীবনে উন্নতি ও সাফল্যের মূলে রয়েছে পরিশ্রম। পরিশ্রম ছাড়া সফলতা পাওয়া যায় না,কিন্তু শুধু পরিশ্রম করলেই যে সফলতা আসবে না, যদি সঠিক দিকনির্দেশনা পরিশ্রমের পাশাপাশি প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা লক্ষ্য ঠিক না থাকলে পরিশ্রমও বৃথা যেতে পারে। সফলতা রাতারাতি আসে না, এ জন্য সময়,সাধনা অধ্যবসায় দরকার। তাই পরিশ্রমের পথ থেকে কখনো পিছপা হওয়া যাবে না।
যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী সে জাতি তত বেশি উন্নত। তাই মনিষীরা বলে থাকেন,পরিশ্রমের কোনাে বিকল্প নেই। Hard work brings good luck.আল্লাহ মানুষকে শক্তি,বুদ্ধি ও মেধা দিয়েছেন পরিশ্রম করার জন্য। বিনা পরিশ্রমে কোনো কিছুই অর্জন করা যায় না। মেধা, বুদ্ধি ও কর্মক্ষমতা মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করেছে। মানুষের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সৌভাগ্য কখনোই স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসে না, এটাকে পরিশ্রম দিয়ে অর্জন করতে হয়। জীবনে সাফল্য পেতে হলে অলসতা ত্যাগ করে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
অলস ব্যক্তির জীবন সম্মন্ধে তার কোন হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। তারা কেবলই ধ্বংসের পথে পদভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত হয়ে মনুষ্যত্ববোধ হারিয়ে ফেলে। সারা জীবন তুষের আগুণের মত জ্বলতে থাকে। কোন সঠিক দিকনির্দেশনা পাই না। উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যহীন জীবনে পরিণত হয় তাদের জীবন। শারীরিক রোগ মানুষের জীবনকে পঙ্গু করে,আর আলস্য জীবন মানুষের সব উদ্যম শক্তিকে হত্যা করে,দেহ ও মনে মরন ব্যাধির মতোই সংক্রামক ও ধ্বংসকারী জড়তা এনে দেয় ।
বিজ্ঞানী এডিসন বলেছেন, সাফল্য হলো শতকরা এক ভাগ প্রতিভা আর নিরানব্বই ভাগ হলো পরিশ্রম। কর্ম ছাড়া পরিশ্রম ছাড়া, প্রতিভা ও মূল্যহীন। প্রতিভা থাকলে হবে না প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে পরিশ্রমের মাধ্যমে নতুন কিছুর সৃষ্টির উদ্দীপনা লাভ করতে হবে। যে কোন কাজের প্রথমবারেই সফল হওয়া অসম্ভব। সে কারণে ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে শিখতে শিখতে সফলতার দিকে এগোতে হয়।
প্রচলিত একটি কথা আছে”হাত জোড় করে নয়, হাত মুঠো করে নয়, পেতে হলে হাত লাগাতে হবে। একজন পরিশ্রমী ব্যক্তিই প্রকৃত অর্থে ভাগ্যবান।
ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন ডাল্টনকে সবাই প্রতিভাবান বলে জানলে ও তিনি নিজেকে সবসময় একজন কঠোর পরিশ্রমী হিসেবে পরিচয় দিতেন।
life is not a bed of roses"অর্থাৎ জীবন কখনোই গোলাপের শয্যা নয়। অলসতা মানুষের জীবনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আজকের বিশ্বসভ্যতার দিকে তাকালে আমাদের হ্দয়-নয়ন জুড়িয়ে যায় আধুনিকতা,তথ্য-প্রযুক্তি নানা রকম কল-কারখানায়। তাতে রয়েছে অগণিত নিবেদিত প্রাণ পরােপকারী মানুষের পরিশ্রম আর একনিষ্ঠ সাধনা। মানুষের কঠোর পরিশ্রমেই গড়ে উঠেছে নয়াভিরাম পৃথিবী। পরিশ্রম ব্যতীত কোনাে শক্তি কোনাে জাতির উন্নয়ন, সমাজের উন্নয়ন,পরিবারের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে না। মানুষের জীবনের প্রতিটি সাফল্য নির্ভর করে তার কর্মের উপর।
ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ার একেবারে যথার্থই বলেছেন আসলে প্রতিভা বলে কিছু নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করো, তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে। নেপোলিয়ান বোনাপার্ট বলেছেন, Impossible is a word which is found only in the dictionary of a fool. অসম্ভব একটি শব্দ যা শুধু বোকাদের অভিধানে পাওয়া যায়।
অলসতা মানুষের মধ্যে তীব্রভাবে জন্ম দেয় হীনম্মন্যতা, কল্পনাপ্রিয়তা,কুসংস্কারাচ্ছন্নতা। এই অলসতা মানুষের অস্থিমজ্জায় মিশে মানুষকে চিরতরে পঙ্গু করে দেয়। আলস্য পারমাণবিক বােমার চেয়েও অধিক ধ্বংসাত্মক ও ভয়ঙ্কর,দিনে দিনে সমস্ত সৃজনশীল শক্তি চুষে খেয়ে ফেলে । ফলে এই পৃথিবীতে এত সম্ভাবনাময় সম্পদ থাকার পর ও তাকে পরিণত হতে হয় অন্যের বােঝারূপে। অলস ব্যক্তি জীবনে কখনো প্রতিষ্ঠা পায় না। বাবা-মা,ভাইবােন, স্ত্রী-পরিজন সবাই তাকে অবজ্ঞার চোখে দেখে। পৃথিবীতে সুন্দরভাবে বাঁচতে হলে পরিশ্রমের কোনাে বিকল্প নেই। যে পরিশ্রম করার পর যে অবসরটুকু পায় তার মধ্যে যে আনন্দ সে অনুভব করে অলস ব্যক্তি কখনাে সে আনন্দ অনুভব করতে পারে না।
আসলে অলসতা মানুষের দেহ ও মনে জড়তা আনে। ব্যাধিগ্রস্ত মানুষ যেমন অপরের সাহায্য ছাড়া চলতে পারে না, তেমনই অলস ব্যক্তিকেও পরগাছার মতাে অপরের দয়ার ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকতে হয় সারাজীবন । দেশ ও জাতির কোনাে মঙ্গল সাধন তাে তারা করতেই পারে না বরং দেশ ও জাতির বােঝা হয়ে অবহেলিত জীবনযাপন করে।
অলস ও অকর্মণ্য ব্যক্তিরাই সমাজে সকল অনাচার ও কুকর্মের উদ্ভাবক। ব্যাধিগ্রস্ত মানুষ যেমন সমাজে রােগবিস্তারে সহায়তা করে, তেমনই অলস মানুষ কুকর্ম দ্বারা সমাজে নৈতিক অবক্ষয়, সামাজিক অবক্ষয় অশান্তি ডেকে আনে। অলসতা মানুষকে পিছিয়ে নেয় আর কর্ম ক্ষমতা মানুষকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে।
তবে কাজের ফাঁকে আনন্দ, বিনোদন ও বিশ্রাম নিতে হয়। কিন্তু বিশ্রাম আরআলস্য এক কথা নয়। বিশ্রাম কাজেরই একটা অঙ্গ। শক্তি সঞ্চয়ের জন্য বিশ্রামের প্রয়ােজন অপরিহার্য। আমাদের সকলের উচিত সবসময় অলসতাকে পরিহার করে কঠোর শ্রমের মাধ্যমে নিজেদেরকে দেশের যােগ্য হিসেবে গড়ে তােলা। প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যত মহান ব্যক্তি সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন, তাদের সবার জীবনের গল্পে একটি সাধারণ বিষয় রয়েছে কঠোর পরিশ্রম। সফলতার মূলমন্ত্রই হলো পরিশ্রম,সাধনা।
জীবনকে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বাঁচিয়ে রাখার জন্য শ্রম ব্যতীত অন্য কোনো সহজ পথ নেই। পরিশ্রমের মাধ্যমে এই জীবনে সফলতা আসবে। সুখ লাভের জন্য যেমন কষ্ট করতে হয় ঠিক তদ্রুপ জীবনে যত পরিশ্রম করা যাবে পরবর্তী জীবন তত উন্নত,ও সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকা যাবে।
আমাদের নিজেদের স্বার্থে আলস্যে পরিহার করে কর্ম ও পরিশ্রমী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তাহলে দেশ,জাতি,ও পরিবারের জন্য কল্যাণ সম্ভব।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। যারা কঠোর পরিশ্রমী, সৃষ্টিকর্তা তাদের সহায়তা করেন। তাই সফলতার পথে এগিয়ে যেতে আমাদের কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে,লক্ষ,উদ্দেশ্য ঠিক করতে হবে।।
লেখকঃ প্রাবন্ধিক